দোকানদারের মুচকি হাসি


বিকেলবেলা। নরম নরম রোদ চারিদিকে। আমি মুখে মাস্ক পরে বাসার পাশের মুদির দোকানে যাচ্ছি। আমার টুথব্রাশের অবস্থা শোচনীয় বিধায় ফেলে দিয়েছি, তাই দোকানে যাচ্ছি নতুন ব্রাশ খরিদ করতে।

এলাকায় মোটামুটি নতুন হবার কারণে দোকানদারের সাথে খুব একটা পরিচিতি নেই। যাইহোক, দোকানের সামনে দাড়িয়ে বললাম, "একটা টুথব্রাশ লাগবে আমার। সফ্ট।"

দোকানদার বলল, "এই একটা আছে দেখেন।"

আমি দেখলাম।

"এইটা বাংলাদেশী আরকি", তারপর আরেকটা বের করে বললো, "এইটা ইন্ডিয়ান, ভালো।"

আমার একটু ইন্ডিয়ান ব্রাশ দেখে সন্দেহ হলো। ভালো বলে খুব একটা মনে হচ্ছে না। জিজ্ঞেস করলাম, "কীভাবে এইটা ইন্ডিয়ান?"

"মানে?"

"মানে এইটা যে ইন্ডিয়ান সেইটা তো দেখে লাগছে না। এইটা যে ইন্ডিয়ান সেইটার প্রমাণ কী?"

দোকানদার মুচকি হেসে বললো, "এইটা যে ইন্ডিয়ান না সেইটার প্রমাণ কী?"

আমি উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। বাহ!

দোকানদার দেখি ভালো ব্যবসায়ী!

এইটা একটা চমৎকার লজিক্যাল ফ্যালাসির একজাম্পল যা আমার সাথে ঘটেছে। লজিক্যাল ফ্যালাসিটা কী বলতে পারবেন?


এই ফ্যালাসিটার নাম "Burden of Proof
 Fallacy" বাংলায় যার নাম "অপ্রমাণের বোঝা কুযুক্তি"। এই কুযুক্তির অশ্রয় প্রায় সময় আমরা নিয়ে থাকি।

প্রমাণ বা যুক্তি উপস্থাপনের দায় তারই, যিনি দাবী উত্থাপন করেন। অন্য কারও তা অপ্রমাণ করার দায় নেই। অন্য কেউ তা অপ্রমাণ না করলেও, তার দাবীটি প্রমাণের বোঝা অন্যের কাঁধে চাপাতে চাইলে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ ও যুক্তির অভাবে তার দাবীটিই খারিজ বা বাতিল হয়ে যাবে।

উপরের ঘটনায় দোকানদার যখন আমাকে বললো এইটা ইন্ডিয়ান ব্রাশ তখন আমি এই ব্রাশটির ইন্ডিয়ান হবার প্রমাণ চাইলাম। আমি চাইতেই পারি। কারণ ব্রাশটা যে ইন্ডিয়ান সেইটা আমার দাবি নয় দোকানদারের দাবি। তাই তার দাবি প্রমাণ করার দায়িত্ব তারই। এইটার প্রমাণ আমার পক্ষে দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এখন, দোকানদার যদি উপযুক্ত প্রমাণ দিতে না পারে তবে তার ব্রাশের ইন্ডিয়ান হবার দাবিটাই বাতিল হয়ে যাবে।


এই ধরনের হেত্বাভাসের উদাহরণ আমাদের চারপাশে প্রচুর আছে। আপনি সহজেই ধরতে পারবেন, শুধু একটু মুক্ত মনে চিন্তা করতে হবে আপনার।

মন্তব্যসমূহ