নারীবাদের প্রাথমিক পাঠ



আমি বেশ অবাক হয়ে একটি বিষয় খেয়াল করলাম। বিষয়টি হলো আমার পরিচিত অনেক মানুষ ফেমিনিজম কী সেইটাই জানে না। তারা যা জানে তার নাম “সুডো-ফেমিনিজম”। অর্থাৎ, অপ-নারীবাদ। এই ২০২০ সালে এসেও নারীবাদ নিয়ে এমন ভুল ধারণা দেখলে সত্যি কষ্ট হয়। নারীবাদ এবং অপ-নারীবাদের পার্থক্য ভালভাবে জানতে হবে।


নারীবাদের মূল বিষয় হলো নারী এবং পুরুষ একদম সমান সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। কেউ একটু বেশিও না, আবার কেউ একটু কমও না। একদম সমান সমান। হ্যাঁ, নারী পুরুষের মাঝে পার্থক্য আছে ঠিকই কিন্তু এই পার্থক্যের কারণে একজন পুরুষ একজন নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয় না, আবার একজন নারীও একজন পুরুষের থেকে শ্রেষ্ঠ হয় না। অ্যাট লিস্ট এই যুগে না।


এই ব্যাপারটা যদি আমরা বুঝে থাকি, তবে বুঝবো নারীবাদ কখনই বলে না মেয়েদের উলঙ্গ হতে এবং সেই সাথে এটিও বলে না যে তাদের বোরখার মধ্যে বস্তাবন্দী হতে। নারীবাদ কখনই একজন নারী কী পোশাক পড়বে তা নিয়ে মাথা ঘামায় না। নারীবাদ যেটা নিয়ে মাথা ঘামায় তা হলো কোনো নারীর উপর যেন কোনো পোশাক চাপিয়ে দেয়া না হয়, সেটি বোরখা হোক অথবা বিকিনি। নারীবাদ সবসময় বলে এসেছে, একজন নারী কেমন পোশাক পড়বে তা সম্পূর্ণ একজন নারীর উপর নির্ভর করে। কেউ যদি বিকিনি পড়ে তবে তাকে “মাগি”, “খানকি” ইত্যাদি বলা কোনোভাবেই যাবে না। আবার কেউ বোরখা পড়লে তাকেও কোনোভাবে “বলদ মহিলা”, “মূর্খ” ইত্যাদি বলা একেবারেই যাবে না। কোনো আইন যদি বলে বিকিনি পড়া যাবে না, নারীবাদ সেটির কঠোর বিরোধিতা করে; আবার কোনো আইন যদি বোরখা পড়া নিষিদ্ধ করে, তবে নারীবাদ সেটিরও কঠোর বিরোধিতা করে।


নারীবাদ সবসময় বলে নারী হয়ে জন্মালে সংসার সামলানোর দায়িত্ব তার, এমনটি ভাবা অত্যন্ত ভয়ংকর। সে নারী দেখে তাকে রান্না করতে হবে, সে নারী দেখে তাকে ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে, সে নারী দেখে তাকে একা হাতে বাচ্চা সামলাতে হবে, নারীবাদ এমন ধারণার তীব্র নিন্দা করে। অবশ্যই একজন নারীকে রান্না করা জানতে হবে, ঘর পরিষ্কার রাখা জানতে হবে, শিশুকে মানুষ করা জানতে হবে কিন্তু এই কারণে নয় যে সে নারী, এই কারণে এইসব জানতে হবে যে জীবনে চলার জন্য এইসব জিনিস শিখে রাখতে হয়। এবং এইসকল কাজও একইভাবে পুরুষেরও শিখে রাখতে হবে। একজন নারী শুধু ঘর সামলাবে এবং একজন পুরুষ বাইরের জগতে কাজ করবে, এমন যদি নিয়ম হয় তবে নারীবাদ এমন নিয়মকে ঘৃণা করে। কিন্তু হ্যাঁ, কোনো দম্পত্তি যদি স্বেচ্ছায় এমন করে দায়িত্ব ভাগ করে নেয় তবে এতে কোনোই সমস্যা নেই।



এভাবে করে আরও অনেক কিছু লেখা যায়। কিন্তু আমি লিখবো না। বাকিটা আপনারা একটু মাথা খাটিয়ে চিন্তা করে বের করুন। আমাদের যারা ফেমিনিজমের কিছুই বুঝে না এবং সুডো-ফেমিনিজম নিয়ে অতি মাত্রায় লাফালাফি করে, তাদের এই দশা কারণ তারা তাদের এই চমৎকার মস্তিষ্ক কাজে লাগায় না।


সমাজে যেসকল মতবাদ ও আইন নারী এবং পুরুষের সমতার এবং নারী স্বাধীনতার অন্তরায়, যে আইন নারীদের গায়ে হাত তুলতে বলে, যে মতবাদ নারীদের পুরুষের চেয়ে নিচু শ্রেণীর জাতি বলে, যে মতবাদ নারীদের বুদ্ধিকে ত্রুটিপূর্ণ বলে, নারীবাদ সেই সকল কিছুরই বিরোধিতা করে এবং সেইসকল মতবাদ ও নিয়মনীতিকে তীব্রভাবে ঘৃণা করে। হ্যাঁ, ঘৃণা করে। আমিও করি এবং আজীবন করবো।




মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ