সুখ সুখ গন্ধ
আব্বার শরীর খাটিয়াতে রাখা হলো।
আমি, শামসুল ভাই ও আরও দুইজন মিলে আব্বাকে গোসল করিয়ে, পরিষ্কার সাদা কাপড় পড়িয়ে, আতর মেখে যখন সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে ফেলেছিলাম, তখন সকাল কেবল শেষ হয়েছে, দুপুর শুরু হবে হবে করছে। কিংবা কে জানে, সকাল হয়তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল, কারো কিছু বুঝে উঠার আগেই।
ছোটবেলায় যেসব খাটিয়া চোখে পড়তো সেগুলোর সবই হতো কাঠের তৈরি। কিছু দামি সেগুন কাঠের, কিছু আবার সাধারণ আম কাঠের। আব্বাকে যাতে রাখা হয়েছে তা এলুমিনিয়ামের। আজকাল কাঠের খাটিয়া তেমন চোখে পড়ে না। তাছাড়া এলুমিনিয়াম বেশ হালকা। আকাশের বিমানগুলো নাকি এই টাইপের ধাতু দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। ধাতুটি মজবুত কিন্তু ওজনে কম। ফলে এক গাঁদা মানুষকে মেঘের মধ্যে দিয়ে এক দুনিয়া থেকে আরেক দুনিয়ায় রেখে আসার কাজটা সহজ হয়ে যায়। অথচ আব্বার শরীর কি ভীষণ হালকা। একেবারে শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। রুপালি খাটিয়াতে সাদা কাপড় মোড়ানো শরীরটির দিকে তাকালে খানিক সময়ের জন্য বিছানার এক কোণে পড়ে থাকা নিরীহ কোলবালিশ বলে ভুল হয়।
পলাশ, কাঁধের কাছে মুখ এনে শামসুল ভাই ধীরে ধীরে বলল, এখন তাহলে যাওয়া যাক, কি বলো?
মাথা নাড়ি আমি। সবাই মিলে খাটিয়াটি কাঁধে তুলে নেই। এবং সাথে সাথেই কর্পূর মিশ্রিত আতরের গন্ধ আমার পুরো শরীরের ভেতর ছড়িয়ে পড়ে, একটু আগে যা বৃষ্টি ভেজা ভোরের সোঁদা গন্ধের সাথে মিলেমিশে ছিল।
মন্থর গতিতে এগিয়ে চললাম সকলে মিলে। পায়ের নিচে রাস্তা ভিজে আছে। রোদ এখনো উঠেনি বলে ভোরের বৃষ্টির দাগ এখনো রয়ে গেছে। কিছু জায়গায় খানাখন্দের ভেতর স্থির পানিতে মেঘে ঢাকা আকাশ দেখা যাচ্ছে। আমরা সন্তর্পণে সেইসব এড়িয়ে হেঁটে চলছি। গোরস্থান কাছেই। মসজিদ থেকে হেঁটে যেতে লাগে পাঁচ মিনিটের মতো। কিন্তু রাস্তা বেশ বাজে। প্রায় প্রতিটা কদমই বেশ সাবধানে ফেলতে হচ্ছে।
এক মনে কিসব দোয়া-দরুদ পড়ে যাচ্ছে শামসুল ভাই। একইসাথে বাকি দু'জনও। এই চারজনই আছি আমরা। আগে পিছে কেউ নেই। থাকবে যে না, এটাই স্বাভাবিক। ছুটির দিন বলে রিকশা-ভ্যান, প্রাইভেট কার তেমন নেই। যা একটা-দুইটা পাশ থেকে পার হয়ে যাচ্ছে, অবাক চোখে এই শবযাত্রার দিকে তাকিয়ে আছে। রাস্তায় করে মরা কুকুরকে নিয়ে গেলেও আগে-পিছে যেখানে দশ-পনেরো জনের মতো লোক জড় হয়, সেখানে আমাদের ব্যাপার যথেষ্ট কৌতূহলউদ্দীপক।
গোরস্থানের গেঁটের কাছে আসতেই শামসুল ভাই জিজ্ঞেস করলো, পূর্ব পাশে ছিল না?
হ্যাঁ। ওই যে দেখেন দাঁড়ায়ে আছে।
দলের একজন উত্তর দিল। দেখলাম, কিছু দূরে, বেশ কয়েক সাড়ি পর গোরস্থানের প্রায় মাঝামাঝি এক স্থানে দুইজন লোক দাঁড়ানো। একজন মাঝবয়সী, শক্তপক্ত, খালি গা, হাতে কোদাল, পড়নের লুঙ্গি শক্ত করে বাঁধা। পাশের জন রোগা, লম্বা, শার্ট গায়ে। সম্ভবত গোরস্থানের কেয়ারটেকার। আমাদের ঢুকতে দেখে ওই শার্ট পড়া রোগা-লম্বা লোকটি হাত নাড়ালো।
গোরস্থানের মেইন গেঁটের একপাশে শিউলি ফুলের গাছ। ভোরের বৃষ্টির জন্য হোক বা যে কারণেই হোক, গাছের সব ফুল গোরস্থানের মূল পথের উপর ছড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে, এই ছোট্ট জায়গায় বুঝি তুমুল তুষারপাত হয়েছে।
আমাদের বাসার মেইন গেঁটের পাশেও এমনি এক শিউলি ফুলের গাছ ছিল। বছরের এই সময়টায় কমবেশি সাদা দেহ, কমলা বোটার ফুলগুলো পড়ে থাকতো মাটির উপর। আব্বা কেন জানি কোনো সময়ই ফুলগুলো মারিয়ে যেতে চাইতেন না। হয় হাতে হাতে ফুলগুলো তুলে আনতেন, নয় তো পাশ কাটিয়ে চলে যেতেন। এই ব্যাপারটা কেউ খেয়াল করেছিল কিনা জানি না। আমি করেছিলাম। একবার, দুবার নয়, বেশ কয়েকবার। কোনো অজানা কারণে শিশুমনে ব্যাপারটা ভীষণ এক দাগ কাটে। অনেকবার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করেছিল তাকে; কেন তিনি এমনটা করতেন। কি মনে করে করিনি তা আজ এক রহস্য।
রহস্য আর রহস্য।
সাদা পথটি মারিয়ে, এক পা, দুই পা করে কবর দেয়ার জায়গায় এসে পৌছালাম। সাবধানে খাটিয়া নামিয়ে কবরের দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম, ভেতরে পানি জমেছে। বেশ অনেকটুকুই। ঝুঁকে তাকালাম তাতে, আমার চেহারা ফুটে উঠলো। চমকে উঠলাম আমি।
এমন না যে অনেকদিন পর নিজেকে দেখছি। আমার বিছানার সামনেই বড় এক আয়না। প্রায় সময় শুয়ে শুয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকি, সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায়। তখন সময়ের হিসাব থাকে না। মিনিট হয়ে যায় ঘণ্টা, সেকেন্ড হয়ে যায় মিনিট। নামহীন এক ঘোরের মধ্যে ডুবে যেতে থাকি। চারপাশ আমাকে চেপে ধরে রাখে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, লাগে ফুসফুস দুটি পা দিয়ে পাড়া দিয়ে রেখেছে কেউ। এক সময়, অনেকটা সময় পরেই, বাঁধনমুক্ত হই। ডাঙ্গায় উঠে আসি। নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসে, ফুসফুস হাপ ছেঁড়ে বাঁচে।
পেছন থেকে শামসুল ভাই বলল, কি দেখো ভেতরে?
কি দেখি? দেখি, কবরের শান্ত জলের ছায়ায় আব্বার মুখ; যে আব্বাকে শেষবার বাসায় দেখেছিলাম, সেই মুখ। অথচ কোনোকালেই আমি আব্বার মতো দেখতে ছিলাম না। তিনি খুবই সুদর্শন একজন পুরুষ ছিলেন। নিখুঁত চেহারা, জলজ চোখ, সূক্ষ্ম নাক, ভালো চেহারার সব গুণই ছিল তাঁর মধ্যে। দেহ ছিল সুঠাম, শক্ত। কণ্ঠ ছিল ভারি। কিন্তু শেষবার যখন কয়েদখানায় দেখা করতে গিয়েছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল লোহার গারদের ওপাড়ে বুঝি ভিনগ্রহের কোনো সরীসৃপ দাঁড়িয়ে আছে।
আব্বা, আমি বলেছিলাম, আব্বা শুনছেন?
হুম।
আপনার শরীর দিন দিন খারাপ করছে। কিছু করতে বলছেন না কেন কাউকে?
আব্বা একটু থেমে উত্তর দিলেন, না ঠিকই তো আছি।
জ্বী না আব্বা। আপনি ঠিক নেই। আবারও আমি কথা বলবো আপনার বিষয়ে, একটা কিছু ব্যবস্থা ঠিকই হবে।
হুম।
কিছু কি লাগবে আপনার, আব্বা?
না।
আব্বার সাথে এই ছিল আমার শেষ কথোপকথন।
গত আট কি নয় মাস ধরেই টের পাচ্ছিলাম আব্বার শরীর ভালো নেই। শরীর বেশ খারাপ করেছে। আমার নিজের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব ছিল এর সবটুকু করে একজন লোক লাগিয়েছিলাম। তিনি আব্বার ব্যাপারটা দেখে রাখতেন। তিন মাস আগে একজন ডাক্তার এসে দেখে গিয়েছিলেন তাকে। সব দেখে বলেছিলেন, এমনি সব ঠিক, যা একটু বার্ধক্যজনিত সমস্যা। তাছাড়া, জেলের ভেতরেও নাকি তাঁর আহামরি শরীর খারাপ করেনি কখনো। কিন্তু এও সত্য, আব্বার জেলের ভেতরকার জীবন নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারনা একেবারে কোনোকালেই ছিল না। কোনো সময়েই মুখ ফুটে কিছু বলতে চাইতেন না তিনি। কোনোকালেই না।
মনে পড়ে, দশ কি এগারো বছর বয়সে প্রথমবার আব্বাকে জেলের ভেতর দেখতে যাই। ওই দিনেই, এক পলক দেখেই বুঝেছিলাম, এই লোক আমার আব্বার মতো দেখতে হলেও আমার আব্বা নন। কি যে ভীষণ অচেনা লাগছিল তাকে দেখতে! চোখ আছে ভাষা নেই। ঠোঁট আছে কিন্তু কৌতুক নেই। কণ্ঠে তাঁর ভেসে বেড়ায় কোনো পাহাড়ি গুহার নৈঃশব্দ্য। এমন কাউকে আমি অন্তত চিনি না। পুরো পৃথিবী, পুরো মহাকাল সেই লোককে আমার আব্বা বলে চেনালেও আমি মেনে নিতে পারতাম না। শুরুতে পারিও নি। কিন্তু বানোয়াট দুনিয়ার রূঢ়তম বাস্তবতা হলো এই অচিন দেশের মানুষই আমার জন্মদাতা। আমার পিতা। তাঁর ধমনীর রক্ত আমার হৃৎপিণ্ডে ঢুকে পড়ে, তাঁর নিঃশ্বাস আমার প্রশ্বাস হয়ে বের হয়। আর জানেন বাস্তবতার সবচেয়ে আদ্ভুত ব্যাপার কি? মানুষ বাস্তবতাকে এক না এক সময় মেনে নেয়। এবং বেশ সহজেই মেনে নেয়। ফলত, আমিও মেনে নিয়েছিলাম।
শামসুল ভাইয়ের কথোপকথনে আমি আবার গোরস্থানে ফিরে এলাম।
তাইলে কি পানি নামার কোনো চান্স নাই? শামসুল ভাই রোগা লম্বা মতন লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো।
না টেরাই মারছি, একেবারে খালি করবার পারি নাই। লোকটি বলল।
আচ্ছা কি আর করার। কলাগাছ নিয়ে আসতে গেছে না?
হ। এতক্ষণে তো চইলা আসার কথা। দেহি একটা কল দেই।
শামসুল ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল, একটু ঝামেলা হয়ে গেল সব মিলায়ে।
আমি মাথা নাড়লাম। বললাম, কিছু করার নেই। তারপর গলার স্বর একটু নামিয়ে বললাম, কত লাগবে একটু হিসাব আমাকে দিও, শামসুল ভাই।
শামসুল ভাই রুমাল বের করে হাঁচি দিলো। এরপর নাক ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, এইসব নিয়ে তুমি চিন্তা কইরো না পলাশ। আমার দায়িত্ব একটা আছে না। একটু থেমে যোগ করলো, চাচীর জন্য তো কিছুই করতে পারলাম না। মরা মুখটাও দেখার নসিব হইলো না। কব্বরে গিয়ে যে দোয়া দরুদ পড়বো, তাও পারি না। চাচার জন্য কিছু একটা করতে দাও আমারে ভাই।
কিছু বললাম না আর। শামসুল ভাই আমাদের বাড়ির উল্টো দিকে থাকতো। ঠিক জানি না সে কেন এবং কীভাবে আমার ও আমাদের এতো আপন হয়ে গেল। আব্বা-আম্মার জন্য তাঁর ভালোবাসার উৎসও আমার অজানা। কখনো জিজ্ঞেস করি নাই। প্রয়োজন হয়তো পড়ে নাই, তাই। অথচ ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি সকলেই শুধু আমাকে ত্যাজ্যই করে আসছে। প্রথমে করলো নানাবাড়ির সকলে, এরপর ধীরে ধীরে পুরো মহল্লা। দাদাবাড়ির দুই-একজন ছিল যা একটু খোঁজ খবর রাখতেন, তারাও একে একে কেমন চুপচাপ হয়ে যান।
মাঝে মাঝে, রাতে হঠাৎ কোনো কারণে ঘুম ভেঙ্গে গেলে মনে করার চেষ্টা করি, কীভাবে না মরে এতদূর এলাম? কি আমাকে এখনো, আজও বাঁচিয়ে রেখেছে? কখনো কখনো উত্তর পাই, প্রায় সময়ই পাই না। আব্বার পাশে থাকাটা একটা কারণ হতে পারে। হয়তো আম্মার কবর আজও খুঁজে না পাওয়া একটা কারণ হলেও হতে পারে।
আম্মার শেষ স্মৃতি কেন যেন এখনো এক জীবন্ত প্রাণীর মতো আমার ভেতর বাস করে। সেইদিনও উথালপাতাল বৃষ্টি হচ্ছিল সকালবেলায়। ৮টায় ক্লাস শুরু হবে। আম্মা আমাকে রেইনকোট পড়িয়ে দিতে দিতে বলছিলেন, আজকে টিফিনে খুব মজার একটা জিনিস দিয়েছি। সবটুকু খেয় কিন্তু, আচ্ছা?
আমি মাথা নাড়ি। পেছন থেকে আব্বা ডাকেন, তাড়াতাড়ি এসো আব্বা। তাড়াতাড়ি!
কি সুন্দরই না আম্মা ছিলেন। আমাকে রেডি করার সময় মুখের দুপাশের আলগা চুলগুলোতে কি অদ্ভুত মায়াময়ই না তাকে লাগতো! ওই শেষ। এরপর দেখা পাই নি। মানে দেখতে দেয়া হয়নি। অবশ্য দেখেও তেমন কোনো লাভ হতো না। মুখ থেতলে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কোনটা চোখ, কোনটা ঠোঁট, কোনটা ভ্রু, কোনটা নাক, কিছুই নাকি আলাদা করা যাচ্ছিল না। দূরে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম অনেকে মিলে সাদা কাপড়ে মরিয়ে আম্মাকে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে।
এই ব্যাস। এরপর আম্মা নেই। কোথায় কবর, কোথায় শেষ ঠিকানা হলো, আজ অবধি জানতে পারিনি। জানার মতো সুযোগও জীবনটা দেয়নি। কারণ একই সাথে আব্বাকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। মৃত মায়ের খোঁজ নিবো, নাকি মৃতবৎ আব্বাকে সাহায্য করবো, গত পনেরো বছর ধরে এর ঠিক মাঝামাঝি অবস্থায় ঝুলে রয়েছি।
কয়েকজন লোকে মিলে বেশ কয়েকটা কলাগাছ কেটে কেটে নিয়ে আসে। এরপর খুব দ্রুত কাজ শুরু করে দেয়। তারা দক্ষ মানুষ। নিমিষেই আব্বাকে পানির উপর ভাসিয়ে রাখা হয়। শামসুল ভাই আমার হাতে এক মুঠি ভেজা মাটি রাখে। তখন তখনই সকলকে অবাক করে দিয়ে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামে।
তাড়াতাড়ি কর! আবার পানি বাইরা গেলে ঝামেলা হইবো। মাঝ বয়সী, শক্ত-পোক্ত শরীরের লোকটি চেঁচিয়ে উঠলো।
রোবোটিক ভঙ্গিমায় দাফনের কাজ চলতে লাগলো। আর, আর প্রতিটা কবরের সাথে আমি সিক্ত হতে থাকলাম। জমে যেতে থাকলাম।
এমনই এক বৃষ্টির দিনে অবনী আমাকে ছেঁড়ে চলে গিয়েছিল। যে প্রেম আমার জীবনে ধুমকেতুর মতো এসেছিল, তা সেইদিন ফানুসের মতো এক দূর আঁধারের দেশে হারিয়ে গিয়েছিল। আব্বা-আম্মার মতো অবনীও কোনো কিছুর উত্তর রেখে যায়নি। আজ সে অদৃশ্য। কিন্তু আমি খুশি। এতে সত্যি বলতে আমার লাভই হয়। কারণ, ওই সময়েই বুঝতে পারি, কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলে না। এমনকি, পাওয়ার দরকারও নেই। না পেলেই বরঞ্চ ভালো।
থাঙ্ক ইউ অবনী।
তোমার জন্যই আজকে দাফনের সময় খুব পুরাতন এক স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল। আব্বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ কালো করে ঝড়ে পড়া বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছেন। আর সাথে গুনগুন করে গেয়ে চলছেন গান। গানের লাইনগুলো মনে না থাকলেও সুর ঠিকই মনে আছে। আব্বা চমৎকার গান গাইতেন। কিন্তু কাউকে শুনাতে চাইতেন না। এই নিয়ে কতবার কত কিছু হয়েছে। কিন্তু তিনি শুনাবেন না তো শুনাবেনই না। গানকে তিনি নিজের জন্য তুলে রেখেছিলেন। সেইগুলো একান্তই তাঁর। অন্য কারো অধিকার তাতে নেই। এক সময় দেখতাম আম্মা চাল ভাজা নিয়ে আব্বার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে। দুইজন মিলে তারপর কুড়মুড় করে খাওয়া শুরু করতেন। ঝড়ে তাদের চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আমি যে এক পাশে বসে রয়েছি, তাদের খেয়ালই নেই। যেন সদ্য জন্ম নেয়া প্রেমিক, প্রেমিকা বর্ষা দর্শন করছে। মগ্ন হয়ে।
কেন যেন মনে হচ্ছে একটু পরেই গুনগুন করে কবরের ভেতর থেকে সেই গানটি শুনতে পাবো। হয়তো পাশের কবরটি আম্মার। হয়তো আমাদের চোখের আড়ালে একটি জগত আছে। সেই জগতেও এমনই ভাবে আঁধার করে বৃষ্টি নামে। সেই বৃষ্টির সাথে মিশে থাকে সুখ সুখ গন্ধ। কতদিন হল সেই গন্ধ আমি পাই না?
~ সমাপ্ত ~
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন