ডিসেম্বরের ১০ তারিখ

 

ডিসেম্বরের ১০ তারিখাটা আমার জন্য স্পেশাল। কারণ এই তারিখে প্রথমবারের মতো আমি কোনো মেয়েকে ভালোবাসার কথা জানাইছিলাম। সরাসরি কইতে পারি নাই। ঘুরাইয়া পেচাইয়া কইছিলাম। কিন্তু কইছিলাম। আর সেও বুঝতে পারছিল। তার মুখে সেইদিন লজ্জা-আনন্দ-কষ্ট সব মিলেমিশে এমন এক ক্যানভাস তৈরি করছিল, যে ক্যানভাস আমি জীবনে আগে কখনো দেখি নাই। পুতুলের মতো মেয়েটা লেমন আইস টি এর মধ্যে ডুবানো স্ট্র নার্ভাসভাবে নাড়তে নাড়তে কইছিল, তার একটু সময় লাগবে। সে জানাবে। ওইদিন রেস্টুরেন্ট থেইকা বাইর হইয়া তাঁর সাথে হাঁটতে হাঁটতে বেইলি রোড পার কইরা শান্তিনগর ফালায়া মৌচাক মার্কেট হইয়া ওর বাসার গলির মুখে নামায় দিছিলাম। ও পরে বাসায় গিয়ে আমারে তার ছবি পাঠায়। লিফটে দাঁড়ানো। হাতে আমার উপহার দেওয়া বইগুলো আর মুখে চায়ের কাপের কম্পিত ধোঁয়ার মতো একটা হাসি।

এরপর দুই এক দিন গ্যাপে আমরা পর পর আটদিন বাইরে দেখা করি।

একদিন ওর সাথে হাঁটতে হাঁটতে রমনা থানা পার কইরা, শাহাবাগের পাঠক সমাবেশে যাই। বই হাতাই। দুইজন দুইজনের দিকে তাকাই। দুইজনই লজ্জা পাই। তারপর সেইখান থেইকা বাইর হই। চইলা যাই টিএসসি। পাশাপাশি বসি। চা খাই। সে নানান উছিলায় আমার দিকে তাকায়। আর আমার উছিলা লাগে না, আমি বেহায়ার মতো তাকায়েই থাকি। তারে বেলি ফুলের মালা কিনা দেই। মালাটা সে খোঁপায় না দিয়া হাতে পেচায়। আমি ফোন বাইর কইরা ওর ছবি তুলি। ও লজ্জা পায়।

আরেকদিন একসাথে রাস্তা পার হওয়ার সময় গাড়ি-ঘোড়ার তোয়াক্কা না কইরা পার হওনের কারণে ওরে হালকা বকা দেই। বলি, এখন থেকে তুমি আমার হাত ধরে রাস্তা পার হবা, বুঝলা? সে হাত বাড়ায়ে দেয়। ওইযে হাত ধরি, আর ছাড়ি না।

অষ্টম দিনে আমরা রমনা পার্কে হাঁটতে হাঁটতে পথ হারায়ে ফেলি। এর মধ্যে সন্ধ্যা হইয়া আসে। শীত জাকায়ে ধরা শুরু করে। আমার গায়ে হুডি। কিন্তু ওর গায়ে গরম কোনো কাপড় নাই। আমি হুডিটা খুইলা দিতে চাইলাম। ও লইলো না। এর বদলে আমার ডানহাতটা ও দুই হাতে পেচায়া ধইরা হাঁটতে থাকলো। এইভাবে কতক্ষণ একসাথে হাটি জানি না। এক সময় আমরা গেট খুইজা পাই। তারপর ওরে রিকশায় উঠায়ে দেই। উঠায় দিয়া আমি ফোন বাইর কইরা লিখি, তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসি আমি। সে তিন সেকেন্ড দেরি কইরা অবশেষে তার ভালোবাসার কথাটা জানায়।

ওই থেইকা শুরু।

এরপর কি অদ্ভুত সুন্দর একটা সময়ই না আমরা দুইজনে মিলা কাটাইছি। কাছাকাছি না থাইকাও পাশাপাশি কত কত রাত, কত কত দিন পর করছি!

কিন্তু সুখ বেশিদিন সহ্য হইলো না আমার। ও বিদায় নিল। যেদিন আমরা ডিসেম্বরের সন্ধায় রমনা পার্কে পথ হারায়া ফেলছিলাম, ওইটার প্রায় তিন বছর পর।

এখন ও কেমন আছে জানি না। জানার ইচ্ছা করে না খুব একটা। আবার করেও।

গত এক বছর ধইরা মুখে ভাঙ্গা হাসি লইয়া ধুইকা ধুইকা বাইচা ছিলাম। ওই বাইচা থাকার মধ্যেই ওরে উৎসর্গ কইরা আস্ত একখানা কবিতার বই লেইখা ফেললাম।

বইয়ের উৎসর্গ পাতাটা এইরকম,

যার কারণে আমি-
অবশেষে জেনেছি মানুষ একা!
মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ